নবজাতকের ঘুমের আদ্যোপান্ত

 অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু : যদি জিজ্ঞেস করা হয়, সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে একজন মায়ের জন্য সবচেয়ে দুরূহ কাজ কোনটি? জানি, অনেকগুলো সম্ভাব্য উত্তর পাওয়া যাবে। সেগুলোর মধ্যে কোনটি যে আদতেই সবচেয়ে কঠিন, তা হয়তো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হবে না কোনো দিনই। তবে একটি ব্যাপার নিশ্চিত করেই বলা যায়, তালিকায় একটি কাজের উল্লেখ থাকবে। সেটি হলো: নবজাতককে ঘুম পাড়ানো। সন্তান জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস একজন মা মাত্রাতিরিক্ত উদ্বিগ্ন থাকবেন, এটি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আর এই প্রথম কয়েক মাসেই নবজাতকের ঘুমের রুটিন সবচেয়ে বেশি অনিয়মিত থাকে। দেখা যায়, সারাদিন ঘুমিয়ে মাঝরাতে জেগে উঠছে সে।

 

নবজাতকের ঘুমের সাধারণ প্যাটার্ন : নবজাতকেরা প্রচুর ঘুমিয়ে থাকে- সাধারণত দিনে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা পর্যন্ত। তবে অধিকাংশ নবজাতকই জন্মের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ একটানা বেশিক্ষণ ঘুমায় না। দুই ঘণ্টা থেকে বড়জোর চার ঘণ্টা অবধি ঘুমানোর পরই জেগে যায় তারা। আর এর ফলাফল? নবজাতক অনিয়মিতভাবে হলেও প্রতিদিন লম্বা সময় ঘুমিয়ে কাটায়, কিন্তু সেটির সাথে প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে না পারার ফলে ঘুমের পরিমাণ কমে যায় তার মায়ের। দৈনিক পর্যাপ্ত যে পরিমাণ ঘুম তাদের প্রয়োজন, সেটুকু ঘুমাতে পারেন না তারা। সারা দিন তো তারা সন্তানের পেছনে ব্যয় করেনই, পাশাপাশি রাতেও সন্তান জেগে গেলে সঙ্গে সঙ্গে জেগে যেতে হয় তাদেরও। নবজাতকের ঘুমের চক্র প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে সংক্ষিপ্ত। নবজাতকেরা ঘুমের মধ্যে বেশিরভাগ সময় চোখের পাতা হালকা নাড়াতে থাকে। এর কারণ, তখন তাদের হালকা ও অগভীর, র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট ঘুম হয়। মস্তিষ্কের বিকাশে এটি খুবই প্রয়োজনীয়। নবজাতকের জন্য ঘুমের অনিয়ম ও অননুমেয়তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফেজ এবং এটি বেশিদিন স্থায়ী হয় না। এছাড়া সাধারণত জন্মের ছয় সপ্তাহ পর থেকেই নবজাতকের ঘুমের রুটিন নিয়মিত হয়ে উঠতে শুরু করে। ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ বয়স থেকেই অধিকাংশ শিশু দিনের বেলা অপেক্ষাকৃত কম সময় এবং রাতের বেলা বেশি ঘুমাতে শুরু করে। অবশ্য বেশিরভাগ শিশুই রাতের বেলা খিদে পেয়ে জেগে ওঠা অব্যাহত রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে অধিকাংশ শিশুই রাতের বেলা একটানা ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুমানোর ক্ষমতা অর্জন করে। কিছু কিছু শিশু হয়তো মাত্র ৬ সপ্তাহ বয়স থেকেই এই অসামান্য সাফল্য লাভ করে, তবে বেশিরভাগ শিশু এই মাইলফলক স্পর্শ করতে ৫ থেকে ৬ মাস লাগিয়ে ফেলে।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি, সিলেট এমএজি মেডিকেল কলেজ, সিলেট।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিনন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» জেলের জালে ধরা পড়ল ১৯ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের কাতলা,বিক্রি ৪৪ হাজার

» অবৈধ অভিবাসন রোধে ইইউ’র সহযোগিতা চেয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» শিবির প্যানেলের চার নারী প্রার্থীই বিজয়ী

» “দুর্জন যে বিদ্বান হলেও সর্বদা পরিত্যাজ্য”: গণেশ

» ডাকসুতে ছাত্রলীগের সঙ্গে আঁতাত করেছে শিবির: মির্জা আব্বাস

» সবার আগে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দাবি করেছে জামায়াত: মাসুদ সাঈদী

» গভীর ষড়যন্ত্রের ফল হচ্ছে ডাকসু নির্বাচন : প্রিন্স

» গণেশ লুঙ্গির আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিপ্লবী নয় :বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায়

» ডাকসু বিজয়ীদের শুভেচ্ছা জানালেন সাবেক ভিপি নুর

» ডাকসু নির্বাচন জাতীয় ভোটের প্রতিফলন না: মান্না

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নবজাতকের ঘুমের আদ্যোপান্ত

 অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু : যদি জিজ্ঞেস করা হয়, সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে একজন মায়ের জন্য সবচেয়ে দুরূহ কাজ কোনটি? জানি, অনেকগুলো সম্ভাব্য উত্তর পাওয়া যাবে। সেগুলোর মধ্যে কোনটি যে আদতেই সবচেয়ে কঠিন, তা হয়তো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হবে না কোনো দিনই। তবে একটি ব্যাপার নিশ্চিত করেই বলা যায়, তালিকায় একটি কাজের উল্লেখ থাকবে। সেটি হলো: নবজাতককে ঘুম পাড়ানো। সন্তান জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস একজন মা মাত্রাতিরিক্ত উদ্বিগ্ন থাকবেন, এটি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আর এই প্রথম কয়েক মাসেই নবজাতকের ঘুমের রুটিন সবচেয়ে বেশি অনিয়মিত থাকে। দেখা যায়, সারাদিন ঘুমিয়ে মাঝরাতে জেগে উঠছে সে।

 

নবজাতকের ঘুমের সাধারণ প্যাটার্ন : নবজাতকেরা প্রচুর ঘুমিয়ে থাকে- সাধারণত দিনে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা পর্যন্ত। তবে অধিকাংশ নবজাতকই জন্মের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ একটানা বেশিক্ষণ ঘুমায় না। দুই ঘণ্টা থেকে বড়জোর চার ঘণ্টা অবধি ঘুমানোর পরই জেগে যায় তারা। আর এর ফলাফল? নবজাতক অনিয়মিতভাবে হলেও প্রতিদিন লম্বা সময় ঘুমিয়ে কাটায়, কিন্তু সেটির সাথে প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে না পারার ফলে ঘুমের পরিমাণ কমে যায় তার মায়ের। দৈনিক পর্যাপ্ত যে পরিমাণ ঘুম তাদের প্রয়োজন, সেটুকু ঘুমাতে পারেন না তারা। সারা দিন তো তারা সন্তানের পেছনে ব্যয় করেনই, পাশাপাশি রাতেও সন্তান জেগে গেলে সঙ্গে সঙ্গে জেগে যেতে হয় তাদেরও। নবজাতকের ঘুমের চক্র প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে সংক্ষিপ্ত। নবজাতকেরা ঘুমের মধ্যে বেশিরভাগ সময় চোখের পাতা হালকা নাড়াতে থাকে। এর কারণ, তখন তাদের হালকা ও অগভীর, র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট ঘুম হয়। মস্তিষ্কের বিকাশে এটি খুবই প্রয়োজনীয়। নবজাতকের জন্য ঘুমের অনিয়ম ও অননুমেয়তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফেজ এবং এটি বেশিদিন স্থায়ী হয় না। এছাড়া সাধারণত জন্মের ছয় সপ্তাহ পর থেকেই নবজাতকের ঘুমের রুটিন নিয়মিত হয়ে উঠতে শুরু করে। ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ বয়স থেকেই অধিকাংশ শিশু দিনের বেলা অপেক্ষাকৃত কম সময় এবং রাতের বেলা বেশি ঘুমাতে শুরু করে। অবশ্য বেশিরভাগ শিশুই রাতের বেলা খিদে পেয়ে জেগে ওঠা অব্যাহত রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে অধিকাংশ শিশুই রাতের বেলা একটানা ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুমানোর ক্ষমতা অর্জন করে। কিছু কিছু শিশু হয়তো মাত্র ৬ সপ্তাহ বয়স থেকেই এই অসামান্য সাফল্য লাভ করে, তবে বেশিরভাগ শিশু এই মাইলফলক স্পর্শ করতে ৫ থেকে ৬ মাস লাগিয়ে ফেলে।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি, সিলেট এমএজি মেডিকেল কলেজ, সিলেট।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিনন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com